কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বিধিনিষেধ না মেনে সাগরে নামার কারণে সৈকতকেন্দ্রিক প্রাণহানি কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না। গত পাঁচ বছরে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে মৃত্যু হয়েছে ২০ পর্যটকের। একই সময়ে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৩৫৪ জনকে। সাঁতার জানা না থাকার পরও সৈকতের পানিতে নেমে হাঁটুপানির সীমা অতিক্রম করে গভীরে যাওয়া, সৈকতে লাগানো লাল এবং লাল-হলুদ পতাকার সংকেত না বোঝা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

এসব দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করে এবার দুর্ঘটনা রোধে সৈকতে নামার আগে লাইফ জ্যাকেট পরাসহ নতুন করে ১০ নির্দেশনা দিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। এগুলো হলো— সাঁতার না জানলে সমুদ্রের পানিতে নামার সময় লাইফ জ্যাকেট ব্যবহার করতে হবে। লাল পতাকা চিহ্নিত করা পয়েন্টে কোনোভাবে নামা যাবে না।

সৈকত এলাকায় সর্বদা লাইফগার্ডের নির্দেশনা মানতে হবে। বিকাল ৫টার পর সমুদ্রে নামা যাবে না। সমুদ্রে নামার আগে জোয়ারভাটাসহ আবহাওয়ার বর্তমান অবস্থা জেনে নিতে হবে। লাইফগার্ড নির্দেশিত নির্ধারিত স্থান অন্য কোনো পয়েন্ট থেকে সমুদ্রে নামা যাবে না। এ ছাড়া সমুদ্রে যে কোনো মুহূর্তে তীব্র স্রোত এবং গুপ্ত গর্ত সৃষ্টি হতে পারে, তাই ভাসমান বস্তু পানিতে নামার আগে বাতাসের গতি সম্পর্কে জেনে নিতে হবে।

শিশুদের সৈকতে সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে, একা সমুদ্রে নামতে দেওয়া যাবে না এবং অসুস্থ অথবা দুর্বল শরীর নিয়ে সমুদ্রে হাঁটুপানির বেশি নামা যাবে না। এ ছাড়া সৈকতের গুপ্ত গর্ত ও গণস্রোতপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এদিকে সমুদ্র স্নানে পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছেন দুই শিফটে ২৭ কর্মী।

হাজার হাজার পর্যটকের সমুদ্র স্নানে নিরাপত্তায় লাইফগার্ড কর্মীর যেমন রয়েছে স্বল্পতা, পাশাপাশি উদ্ধার সরঞ্জামাদির সংকট রয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। কক্সবাজার সি সেফ লাইফগার্ড সংস্থার প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, কর্মী ও উদ্ধার সরঞ্জামাদির সীমাবদ্ধের পাশাপাশি লাল পতাকা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই কিন্তু নির্দেশনা না মেনে গোসল করতে নামছেন।

এ ক্ষেত্রে পর্যটকদেরও অনেক বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, না হলে দুর্ঘটনা ঘটনা রোধ করা কঠিন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা যায়, বিধিনিষেধ অমান্য করে সৈকতে পানিতে স্নানে নামার কারণে গত ৫ বছরে অন্তত মৃত্যু হয়েছে ২০ পর্যটকের। একই সময়ে সমুদ্র থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে ৩৫৪ জনকে।

এদিকে সৈকতে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ১০ নির্দেশনা কেন্দ্র করে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে এক ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়। পানিতে নামার আগে করণীয় সম্পর্কে সচেতনতামূলক ১০ দিনব্যাপী এ ক্যাম্পেইনের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (মানব সম্পদ) নাসিম আহমেদ,

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) বিভীষণ কান্তি দাশ, জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (পর্যটন সেল) মুরাদ ইসলামসহ ট্যুর অপারেটর, ফায়ার সার্ভিস ও বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকর্তারা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ বলেন, সৈকতকেন্দ্রিক দুর্ঘটনা রোধে ১০

নির্দেশনার পাশাপাশি সৈকতে আগত পর্যটকদের মাঝে সচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১০ দিনব্যাপী ক্যাম্পেইনের আয়োজন করা হয়েছে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসন চায়, সৈকতে যেন আর কোনো দুর্ঘটনা বা প্রাণহানির মতো ঘটনা না ঘটে। এ কারণে যেসব পর্যটক এসব নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সৈকতে নামবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।